রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:১৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে নতুন পেঁয়াজ ভরপুর ওঠায় নিত্যপণ্যটির দাম বেশ ক্রেতার নাগালে চলে এসেছিল। এক কেজি পেঁয়াজের দাম ৩৫-৪০ টাকায় নেমেছিল। তবে সপ্তাহ না ঘুরতেই আবার ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে পেঁয়াজের বাজার। এক লাফে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে পেঁয়াজের দাম। কোনো কোনো বাজারে এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এছাড়া বাজারে সব ধরণের মাছের দাম আরেক দফা বেড়েছে। মুরগি-মাংস এবং চালের বাজার আগের মতোই চড়া রয়েছে। তবে কেবল মাত্র সবজির বাজারেই ক্রেতা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে, কারণ বাজারে সব ধরণের সবজির দাম একেবারে নাগালের মধ্যে রয়েছে।
গত শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে গতকাল প্রতি কেজি দেশি নতুন পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দিন দশেক আগে দাম ছিল ৪০-৪৫ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি।
পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা দৈনিক দিনের সময়কে জানান, বাজারে এখন দেশি নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে; বিপরীতে কমেছে বিদেশ থেকে আমদানি। অন্যদিকে সরবরাহ বেশি থাকায় সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম কমে ৪০-৫০ টাকায় নেমেছিল। তবে এতে পেঁয়াজচাষিরা তেমন লাভ পাচ্ছিলেন না। এ কারণে চাষিরা পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়িয়েছেন।
এক মাসের বেশি সময় ধরে বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি। বাজারভেদে বর্তমানে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩২০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে এ দাম ৩০-৪০ টাকা কম ছিল। কারওয়ান বাজারে মুরগি বিক্রেতা জহিরুল স্বপন বলেন, সাধারণত মুরগির দাম কয়েক দিন পরপর ওঠানামা করে। কিন্তু এবার এক মাসের বেশি সময় ধরে এক জায়গায় দাম স্থির হয়ে আছে। তবে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। গতকাল এক ডজন ডিম ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে গরুর মাংস হাড়সহ ৮০০ টাকা এবং হাড়ছাড়া ১০০০ টাকা এবং ছাগল-খাসির মাংস ১০০০-১২০০ টাকা কেজি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
বর্তমানে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। তবে এর মাঝেও চালের দাম বাড়তি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, খুচরা পর্যায়ে এখন মোটা চাল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা, মাঝারি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং সরু চাল ৭০ থেকে ৭৪ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির হিসাবে, এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালে ৩-৪ টাকা, মাঝারি চালে ২ টাকা ও সরু চালে ২-৪ টাকা বেড়েছে। তবে খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, টিসিবির হিসাবের চেয়ে বাজারে চালের দাম আরও কিছুটা বেশি।
বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে খুচরা দোকানগুলোতে এখনো চাহিদা অনুসারে তেল সরবরাহ করছেন না ডিলাররা। গতকাল ঢাকার চারটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দোকানে স্বল্পসংখ্যায় এক-দুটি ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল রয়েছে। বিক্রেতারা জানান, বোতলজাত সয়াবিন তেলের এই সরবরাহ-সংকট প্রায় দুই মাস ধরে চলছে। আর টিসিবির হিসাবে, বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২-৭ টাকা বেড়েছে।
কাঁচাবাজারে প্রায় সব ধরনের সবজি কম দামে পাচ্ছেন ক্রেতারা। বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কম দামে কিনে স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতারা। গত দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা ও কচুর লতি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কলার হালি ৩০, শালগম ৪০, গাজর ৫০, প্রতি কেজি পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, ঝিঙা-ধুন্দল ৭০ টাকা, টমেটো ৫০, পালংশাক, লাল শাক, পেঁয়াজের কলি প্রতি আঁটি ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
এদিকে, মাছ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বছরের শুরু ও শীত মৌসুমে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে মাছের। তবে সেই তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম, যে কারণে দাম বেড়েছে। তারা আরও জানান, শেষ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে একটু একটু করে বেড়েছে মাছের দাম। এখন কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বেশি।
বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা ১৮০-২০০ টাকার মধ্যে ছিল। এছাড়া একইভাবে দাম বেড়ে পাবদা ৩৬০-৪০০, চাষের শিং ৫০০ থেকে ৫৫০, এক কেজি সাইজের রুই-কাতল ৩০০-৩২০, বড় রুই-কাতল ৪০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া সামুদ্রিক কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, প্রতি কেজি দেশি শিং ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকার ওপরে এবং ছোট ইলিশের দাম ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি।